Thursday, April 14, 2016

= >> জীবনানন্দ দাস



 

 

আকাশলীনা

  জীবনানন্দ দাস

 

সুরঞ্জনা, অইখানে যেয়োনাকো তুমি,
বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে;
ফিরে এসো সুরঞ্জনা :
নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে;
ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে;
ফিরে এসো হৃদয়ে আমার;
দূর থেকে দূরে - আরও দূরে
যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর।
কী কথা তাহার সাথে? - তার সাথে!
আকাশের আড়ালে আকাশে
মৃত্তিকার মতো তুমি আজ :
তার প্রেম ঘাস হয়ে আসে।
সুরঞ্জনা,
তোমার হৃদয় আজ ঘাস :
বাতাসের ওপারে বাতাস -
আকাশের ওপারে আকাশ

 ==========================================================

 

বনলতা সেন

  জীবনানন্দ দাস

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,
সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে
অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে
সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর
হাল ভেঙ্গে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,
তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, 'এতদিন কোথায় ছিলেন?'
পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মত
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;
পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন
তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;
সব পাখি ঘরে আসে - সব নদী - ফুরায় জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন

, ==========================================================

 


বনের চাতক-মনের চাতক

  জীবনানন্দ দাস

বনের চাতক বাঁধল বাসা মেঘের কিনারায়-
মনের চাতক হারিয়ে গেল দূরের দুরাশায়!
ফুঁপিয়ে ওঠে কাতর আকাশ সেই হতাশার ক্ষোভে-
সে কোন্ বোঁটের ফুলের ঠোঁটের মিঠা মদের লোভে
বনের চাতক-মনের চাতক কাঁদছে অবেলায়!
পুবের হাওয়ায় হাপর জ্বলে, আগুনদানা ফাটে!
কোন্ ডাকিনীর বুকের চিতায় পচিম আকাশ টাটে!
বাদল-বৌয়ের চুমার মৌয়ের সোয়াদ চেয়ে চেয়ে
বনের চাতক-মনের চাতক চলছে আকাশ বেয়ে,
ঘাটের ভরা কলসি -কার কাঁদছে মাঠে মাঠে!
ওরে চাতক, বনের চাতক, আয় রে নেমে ধীরে
নিঝুম ছায়া-বৌরা যেথা ঘুমায় দীঘি ঘিরে,
"
দে জল!" 'লে ফোঁপাস কেন? মাটির কোলে জল
খবর-খোঁজা সোজা চোখের সোহাগে ছল্ছল্ !
মজিস নে রে আকাশ-মরুর মরীচিকার তীরে!
মনের চাতক, হতাশ উদাস পাখায় দিয়ে পাড়ি
কোথায় গেলি ঘরের কোণের কানাকানি ছাড়ি?
ননীর কলস আছে রে তার কাঁচা বুকের কাছে,
আতার ক্ষীরের মতো সোহাগ সেথায় ঘিরে আছে!
আয় রে ফিরে দানোয়-পাওয়া, আয় রে তাড়াতাড়ি।
বনের চাতক, মনের চাতক আসে না আর ফিরে,
কপোত-ব্যথা বাজায় মেঘের শকুনপাখা ঘিরে!
সে কোন্ ছুঁড়ির চুড়ি আকাশ-শুঁড়িখানায় বাজে!
চিনিমাখা ছায়ায় ঢাকা চুনীর ঠোঁটের মাঝে
লুকিয়ে আছে সে-কোন্ মধু মৌমাছিদের ভিড়ে!


==========================================================

বেদিয়া

  জীবনানন্দ দাস

চুলিচালা সব ফেলেছে সে ভেঙে, পিঞ্জরহারা পাখি!
পিছুডাকে কভু আসে না ফিরিয়া, কে তারে আনিবে ডাকি?
উদাস উধাও হাওয়ার মতন চকিতে যায় সে উড়ে,
গলাটি তাহার সেধেছে অবাধ নদী-ঝর্ণার সুরে;
নয় সে বান্দা রংমহলের, মোতিমহলের বাঁদী,
ঝোড়ো হাওয়া সে যে, গৃহপ্রাঙ্গণে কে তারে রাখিবে বাঁধি!
কোন্ সুদূরের বেনামী পথের নিশানা নেছে সে চিনে,
ব্যর্থ ব্যথিত প্রান্তর তার চরণচিহ্ন বিনে!
যুগযুগান্ত কত কান্তার তার পানে আছে চেয়ে,
কবে সে আসিবে ঊষর ধূসর বালুকা-পথটি বেয়ে
তারই প্রতীক্ষা মেগে 'সে আছে ব্যাকুল বিজন মরু!
দিকে দিকে কত নদী-নির্ঝর কত গিরিচূড়া-তরু
বাঞ্ছিত বন্ধুর তরে আসন রেখেছে পেতে
কালো মৃত্তিকা ঝরা কুসুমের বন্দনা-মালা গেঁথে
ছড়ায়ে পড়িছে দিগ্দিগন্তে ক্ষ্যাপা পথিকের লাগি!
বাবলা বনের মৃদুল গন্ধে বন্ধুর দেখা মাগি
লুটায়ে রয়েছে কোথা সীমান্তে শরৎ উষার শ্বাস!
ঘুঘু-হরিয়াল-ডাহুক-শালিখ-গাঙচিল-বুনোহাঁস
নিবিড় কাননে তটিনীর কূলে ডেকে যায় ফিরে ফিরে
বহু পুরাতন পরিচিত সেই সঙ্গী আসিল কি রে!
তারই লাগি ভায় ইন্দ্রধনুক নিবিড় মেঘের কূলে,
তারই লাগি আসে জোনাকি নামিয়া গিরিকন্দরমূলে।
ঝিনুক-নুড়ির অঞ্জলি 'য়ে কলরব 'রে ছুটে
নাচিয়া আসিছে অগাধ সিন্ধু তারই দুটি করপুটে।
তারই লাগি কোথা বালুপথে দেখা দেয় হীরকের কোণা,
তাহারই লাগিয়া উজানী নদীর ঢেউয়ে ভেসে আসে সোনা!
চকিতে পরশপাথর কুড়ায়ে বালকের মতো হেসে
ছুড়ে ফেলে দেয় উদাসী বেদিয়া কোন্ সে নিরুদ্দেশে!
যত্ন করিয়া পালক কুড়ায়, কানে গোঁজে বনফুল,
চাহে না রতন-মণিমঞ্জুষা হীরে-মাণিকের দুল,
-
তার চেয়ে ভালো অমল উষার কনক-রোদের সীঁথি,
তার চেয়ে ভালো আলো-ঝল্মল্ শীতল শিশিরবীথি,
তার চেয়ে ভালো সুদূর গিরির গোধূলি-রঙিন জটা,
তার চেয়ে ভালো বেদিয়া বালার ক্ষিপ্র হাসির ছটা!
কী ভাষা বলে সে, কী বাণী জানায়, কিসের বারতা বহে!
মনে হয় যেন তারই তরে তবু দুটি কান পেতে রহে
আকাশ-বাতাস-আলোক-আঁধার মৌন স্বপ্নভরে,
মনে হয় যেন নিখিল বিশ্ব কোল পেতে তার তরে



==========================================================

অস্তচাঁদে

    জীবনানন্দ দাস

ভালোবাসিয়াছি আমি অস্তচাঁদ, -ক্লান্ত শেষপ্রহরের শশী!
-
অঘোর ঘুমের ঘোরে ঢলে যবে কালো নদী-ঢেউয়ের কলসী,
নিঝ্ঝুম বিছানার পরে
মেঘবৌ' খোঁপাখসা জোছনাফুল চুপে চুপে ঝরে,-
চেয়ে থাকি চোখ তুলে'-যেন মোর পলাতকা প্রিয়া
মেঘের ঘোমটা তুলে' প্রেত-চাঁদে সচকিতে ওঠে শিহরিয়া!
সে যেন দেখেছে মোরে জন্মে জন্মে ফিরে' ফিরে' ফিরে'
মাঠে ঘাটে একা একা, -বুনোহাঁস-জোনাকির ভিড়ে!
দুশ্চর দেউলে কোন্-কোন্ যক্ষ-প্রাসাদের তটে,
দূর উর-ব্যাবিলোন-মিশরের মরুভূ-সঙ্কটে,
কোথা পিরামিড তলে, ঈসিসের বেদিকার মূলে,
কেউটের মতো নীলা যেইখানে ফণা তুলে উঠিয়াছে ফুলে,
কোন্ মনভুলানিয়া পথচাওয়া দুলালীর মনে
আমারে দেখেছে জোছনা-চোর চোখে-অলস নয়নে!
আমারে দেখেছে সে যে আসরীয় সম্রাটের বেশে
প্রাসাদ-অলিন্দে যবে মহিমায় দাঁড়ায়েছি এসে-
হাতে তার হাত, পায়ে হাতিয়ার রাখি
কুমারীর পানে আমি তুলিয়াছি আনন্দের আরক্তিম আঁখি!
ভোরগেলাসের সুরা-তহুরা, 'রেছি মোরা চুপে চুপে পান,
চকোরজুড়ির মতো কুহরিয়া গাহিয়াছি চাঁদিনীর গান!
পেয়ালায়-পায়েলায় সেই নিশি হয় নি উতলা,
নীল নিচোলের কোলে নাচে নাই আকাশের তলা!
নটীরা ঘুমায়েছিল পুরে পুরে, ঘুমের রাজবধূ-
চুরি করে পিয়েছিনু ক্রীতদাসী বালিকার যৌবনের মধু!
সম্রাজ্ঞীর নির্দয় আঁখির দর্প বিদ্রূপ ভুলিয়া
কৃষ্ণাতিথি-চাঁদিনীর তলে আমি ষোড়শীর উরু পরশিয়া
লভেছিনু উল্লাস-উতরোল!-আজ পড়ে মনে
সাধ-বিষাদের খেদ কত জন্মজন্মান্তের, রাতের নির্জনে!
আমি ছিনু 'ক্রবেদুর' কোন্ দূর 'প্রভেন্স্'-প্রান্তরে!
-
দেউলিয়া পায়দল্-অগোচর মনচোর-মানিনীর তরে
সারেঙের সুর মোর এমনি উদাস রাত্রে উঠিত ঝঙ্কারি!
আঙুরতলায় ঘেরা ঘুমঘোর ঘরখানা ছাড়ি
ঘুঘুর পাখনা মেলি মোর পানে আসিল পিয়ারা;
মেঘের ময়ূরপাখে জেগেছিল এলোমেলো তারা!
-'
অলিভ' পাতার ফাঁকে চুন চোখে চেয়েছিল চাঁদ,
মিলননিশার শেষে-বৃশ্চিক, গোক্ষুরাফণা, বিষের বিস্বাদ!
স্পেইনের 'সিয়েরা' ছিনু আমি দস্যু-অশ্বারোহী-
নির্মম-কৃতান্ত-কাল-তবু কী যে কাতর, বিরহী!
কোন্ রাজনন্দিনীর ঠোঁটে আমি এঁকেছিনু বর্বর চুম্বন!
অন্দরে পশিয়াছিনু অবেলার ঝড়ের মতন!
তখন রতনশেজে গিয়েছিল নিভে মধুরাতি,
নীল জানালার পাশে-ভাঙা হাটে-চাঁদের বেসাতি।
চুপে চুপে মুখে কার পড়েছিনু ঝুঁকে!
ব্যাধের মতন আমি টেনেছিনু বুকে
কোন্ ভীরু কপোতীর উড়ু-উড়ু ডানা!
-
কালো মেঘে কেঁদেছিল অস্তচাঁদ-আলোর মোহানা!
বাংলার মাঠে ঘাটে ফিরেছিনু বেণু হাতে একা,
গঙ্গার তীরে কবে কার সাথে হয়েছিল দেখা!
'
ফুলটি ফুটিলে চাঁদিনী উঠিলে' এমনই রূপালি রাতে
কদমতলায় দাঁড়াতাম গিয়ে বাঁশের বাঁশিটি হাতে!
অপরাজিতার ঝাড়ে- নদীপারে কিশোরী লুকায়ে বুঝি!-
মদনমোহন নয়ন আমার পেয়েছিল তারে খুঁজি!
তারই লাগি বেঁধেছিনু বাঁকা চুলে ময়ূরপাখার চূড়া,
তাহারই লাগিয়া শুঁড়ি সেজেছিনু-ঢেলে দিয়েছিনু সুরা!
তাহারই নধর অধর নিঙাড়ি উথলিল বুকে মধু,
জোনাকির সাথে ভেসে শেষরাতে দাঁড়াতাম দোরে বঁধু!
মনে পড়ে কি তা!-চাঁদ জানে যাহা, জানে যা কৃষ্ণাতিথির শশী,
বুকের আগুনে খুন চড়ে-মুখ চুন হয়ে যায় একেলা বসি!



==========================================================

স্বপ্নের হাত


পৃথিবীর বাধাএই দেহের ব্যাঘাতে
 হৃদয়ে বেদনা জমেস্বপনের হাতে
 আমি তাই আমারে তুলিয়া দিতে চাই।
 যেই সব ছায়া এসে পড়ে
 দিনের রাতের ঢেউয়েতাহাদের তরে
জেগে আছে আমার জীবন;
সব ছেড়ে আমাদের মন
ধরা দিত যদি এই স্বপনের হাতে!
পৃথিবীর রাত আর দিনের আঘাতে
বেদনা পেত না তবে কেউ আর
থাকিত না হৃদয়ের জরা
সবাই স্বপ্নের হাতে দিত যদি ধরা!…
আকাশ ছায়ার ঢেউয়ে ঢেকে
সারাদিনসারা রাত্রি অপেক্ষায় থেকে
পৃথিবীর যত ব্যথাবিরোধ, বাস্তব
হৃদয় ভুলিয়া যায় সব
চাহিয়াছে অন্তর যে ভাষা,
যেই ইচ্ছা, যেই ভালোবাসা,
খুঁজিয়াছে পৃথিবীর পারে পারে গিয়া
স্বপ্নে তাহা সত্য হয়ে উঠেছে ফলিয়া!
মরমের যত তৃষ্ণা আছে
তারই খোঁজে ছায়া আর স্বপনের কাছে
তোমরা চলিয়া আস
তোমরা চলিয়া আস সব!
ভুলে যাও পৃথিবীর ব্যথাব্যাঘাতবাস্তব!
সকল সময়
স্বপ্নশুধু স্বপ্ন জন্ম লয়
যাদের অন্তরে
পরস্পরে যারা হাত ধরে
নিরালা ঢেউয়ের পাশে পাশে
গোধূলির অস্পষ্ট আকাশে
যাহাদের আকাঙক্ষার জন্ম মৃত্যুসব
পৃথিবীর দিন আর রাত্রির রব
শোনে না তাহারা!
সন্ধ্যার নদীর জল, পাথরে জলের ধারা
আয়নার মতো
জাগিয়া উঠিছে ইতস্তত
তাহাদের তরে।
তাদের অন্তরে
স্বপ্ন, শুধু স্বপ্ন জন্ম লয়
সকল সময়!…
পৃথিবীর দেয়ালের পরে
আঁকাবাঁকা অসংখ্য অক্ষরে
একবার লিখিয়াছি অন্তরের কথা
সে সব ব্যর্থতা
আলো আর অন্ধকারে গিয়াছে মুছিয়া!
দিনের উজ্জ্বল পথ ছেড়ে দিয়ে
ধূসর স্বপ্নের দেশে গিয়া
হৃদয়ের আকাঙক্ষার নদী
ঢেউ তুলে তৃপ্তি পায়ঢেউ তুলে তুপ্তি পায় যদি
তবে পৃথিবীর দেয়ালের পরে
লিখিতে যেয়ো না তুমি অস্পষ্ট অক্ষরে
অন্তরের কথা! —
আলো আর অন্ধকারে মুছে যায় সে সব ব্যর্থতা!
পৃথিবীর অই অধীরতা
থেমে যায়, আমাদের হৃদয়ের ব্যথা
দূরের ধুলোর পথ ছেড়ে
স্বপ্নেরেধ্যানেরে
কাছে ডেকে লয়
উজ্জ্বল আলোর দিন নিভে যায়
মানুষেরও আয়ূ শেষ হয়
পৃথিবীর পুরানো সে পথ
মুছে ফেলে রেখা তার
কিন্তু এই স্বপ্নের জগৎ
চিরদিন রয়!
সময়ের হাত এসে মুছে ফেলে আর সব
নক্ষত্রেরও আয়ু শেষ হয়!

==========================================================


স্মৃতি



থমথমে রাত, আমার পাশে বসল অতিথি-
বললে, আমি অতীত ক্ষুধা-তোমার অতীত স্মৃতি!
যে দিনগুলো সাঙ্গ হল ঝড়বাদলের জলে,
শুষে গেল মেরুর হিমে, মরুর অনলে,
ছায়ার মতো মিশেছিলাম আমি তাদের সনে;
তারা কোথায়?-বন্দি স্মৃতিই কাঁদছে তোমার মনে!
কাঁদছে তোমার মনের খাকে, চাপা ছাইয়ের তলে,
কাঁদছে তোমার স্যাঁত্সেঁতে শ্বাস-ভিজা চোখের জলে,
কাঁদছে তোমার মূক মমতার রিক্ত পাথার ব্যেপে,
তোমার বুকের খাড়ার কোপে, খুনের বিষে ক্ষেপে!
আজকে রাতে কোন্ সে সুদূর ডাক দিয়েছে তারে,-
থাকবে না সে ত্রিশূলমূলে, শিবের দেউলদ্বারে!
মুক্তি আমি দিলেম তারে-উল্লাসেতে দুলে
স্মৃতি আমার পালিয়ে গেল বুকের কপাট খুলে
নবালোকে-নবীন উষার নহবতের মাঝে।
ঘুমিয়েছিলাম, দোরে আমার কার করাঘাত বাজে!
আবার আমায় ডাকলে কেন স্বপনঘোরের থেকে!
অই লোকালোক-শৈলচূড়ায় চরণখানা রেখে
রয়েছিলাম মেঘের রাঙা মুখের পানে চেয়ে,
কোথার থেকে এলে তুমি হিম সরণি বেয়ে!
ঝিম্ঝিমে চোখ, জটা তোমার ভাসছে হাওয়ার ঝড়ে,
শ্মশানশিঙা বাজল তোমার প্রেতের গলার স্বরে!
আমার চোখের তারার সনে তোমার আঁখির তারা
মিলে গেল, তোমার মাঝে আবার হলেম হারা!
হারিয়ে গেলাম ত্রিশূলমূলে, শিবের দেউলদ্বারে;
কাঁদছে স্মৃতি-কে দেবে গো-মুক্তি দেবে তারে!

==========================================================


অবশেষে




এখানে প্রশান্ত মনে খেলা করে উঁচু উঁচু গাছ।
সবুজ পাতারপরে যখন নেমেছে এসে দুপুরের সূর্যের আঁচ
নদীতে স্মরণ করে একবার পৃথিবীর সকালবেলাকে।
আবার বিকলে হলে অতিকায় হরিণের মতো শান্ত থাকে
এই সব গাছগুলো, -যেন কোনো দূর থেকে অস্পষ্ট বাাতস
বাঘের ঘ্রাণের মোত হৃদয়ে জাগায়ে যায় ত্রাস;
চেয়ে দেখ- ইহাদের পরস্পর নীলিম বিন্যাস
 নড়ে উঠে ত্রস্ততায়, – আধো নীল আকাশের বুকে
হরিণের মতো দ্রুত ঠ্যাঙের তুরুকে
অন্তর্হিত হয়ে যেতে পারে তারা বটে;
একজোট হেয় কাজ করে মানুষেরা যে- রকম ভোটের ব্যালটে :
তবুও বাঘিনী হয়ে বাতাসকে আলিঙ্গন করে -
সাগরের বালি আর রাত্রির নক্ষত্রের তরে।

No comments:

Post a Comment

হট জোকস ১৮+